পরিত্যক্ত পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল তৈরি” রাবি শিক্ষার্থীর

পরিত্যক্ত পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল তৈরি” রাবি শিক্ষার্থীর

রাবি প্রতিবেদক: পরিবেশ সুরক্ষার উদ্যোগ নিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে পরিত্যক্ত পলিথিনের ওপর গবেষণা শুরু করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ হিল কাফী ও তার বন্ধুরা।

মাত্র আট মাসের প্রচেষ্টায় পরিত্যক্ত পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল ও গ্যাস উৎপাদন পদ্ধতি উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছেন তারা। নিজেদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি নিয়ে তারা এ বছরের মধ্যেই বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

আব্দুল্লাহ হিল কাফী জানান, এই প্রযুক্তিটি যেমন খরচ কমাবে তেমনি মাটি, পানি ও বায়ুর ক্ষতি করবে না। উৎপাদিত তেল ব্যবহার করা যাবে শিল্প কল-কারখানায় জ্বালানি উপকরণ হিসেবে। এছাড়া খনন যন্ত্র, রাস্তা বেলন বা লোডিং মেশিনের মতো নিম্নগতির ইঞ্জিনগুলোতে পরিমার্জিত ডিজেল ও পেট্রল ব্যবহার করা যাবে।

তিনি আরও জানান, যে প্রক্রিয়ায় এই তেল উৎপাদন সম্ভব হয়েছে সেই পদ্ধতিটির নাম পাইরোলাইসিস। তেল উৎপাদনের বর্তমান কাজ চলছে রাজশাহী নগরীর ছোট বনগ্রাম এলাকায়।

আব্দুল্লাহ হিল কাফী জানান, এ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত মোট বর্জ্য পলিথিন থেকে ৭০-৭৮ শতাংশ ফার্নেস তেল ও ৫-৮ শতাংশ কার্বন কালো পাওয়া যাবে। সেই সঙ্গে ফার্নেস তেল হতে বর্জ্য তেল নিঃসরণ যন্ত্রের সাহায্যে ৬৫ শতাংশ পেট্রল ও ৩০ শতাংশ পরিমার্জিত ডিজেল পাওয়া যাবে। এ ছাড়াও পাইরোলাইসিস প্রক্রিয়ার সময় প্রাকৃতিক গ্যাসের তুলনায় উচ্চতর ক্যালরিমূল্য সম্পন্ন ১০-১৮ শতাংশ নন-কনডেন্সেবল গ্যাস তৈরি হয়।

তিনি আরও জানান, তাদের উৎপাদিত জ্বালানি তেলের ক্যালরিফিক মান ফার্নেসের ক্ষেত্রে ৩৮.৫ মেগাজুল/কেজি ও পেট্রলিয়াম পেট্রলের ক্ষেত্রে ৪২.০৯ মেগাজুল/কেজি। এটি বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) কর্তৃক পরীক্ষিত।

কার্বন কালো সম্পর্কে কাফী জানান, কার্বন কালোটি মৃত্তিকা দিয়ে তৈরি ইট বা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এই কার্বন কালো প্রক্রিয়াজাত করে উচ্চমূল্য সম্পন্ন এন-২২০ ও এন-৩৩০ কার্বন পাওয়া যায়। এ ছাড়াও এটি রঙের মাস্টার ব্যাচ হিসেবে পাইপ, ক্যাবল জ্যাকেট প্রভৃতির মৌলিক উপাদান হিসেবে প্রক্রিয়াজাত করা যাবে।

তিনি আরও জানান, পুরো প্ল্যান্ট প্রস্তুত ও জ্বালানি উৎপাদন করতে আট মাস একটানা কাজ করতে হয়েছে। এ প্ল্যান্টে খুব বেশি খরচেরও প্রয়োজন নেই। ১ হাজার ৫০০ বর্গফুট জমির মধ্যেই হয়ে যাবে পুরো প্ল্যান্ট। ১ হাজার লিটার পানিতে চলে প্ল্যান্টটি। তাপ ও চাপের নিয়ন্ত্রণ, চুল্লি পরিচালনা ও উৎপাদন তোলার জন্য দুজন মানুষ হলেই চলে এ প্ল্যান্ট।

আবদুল্লাহ হিল কাফীর নেতৃত্বে এ প্ল্যান্ট তৈরিতে কাজ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন বিভাগের মাহমুদুল হাসান, আভিলাষ দাস তমাল, বাবুল চন্দ্র রায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব সহকারী নাসির উদ্দিন আহমেদ লিমন ও মাহমুদুল হাসান নামে আরেক শিক্ষার্থী।

তারা জানান, ডিস্টিলেশন প্ল্যান্টসহ পাইরোলাইসিস প্ল্যান্ট বানাতে খরচ পড়বে দুই লাখ টাকার মতো। প্রতিদিন গড়ে ৪-৭ ঘণ্টায় ৮০ কেজি হিসেবে বছরে ২৪ টন জ্বালানি তেল উৎপাদন করা যাবে এ প্ল্যান্ট দিয়ে। যার মধ্যে ফার্নেস তেল ১৮ টন এবং তা থেকে পেট্রল ১১.৭ টন ও ডিজেল ৩.৮৪ টন, কার্বন কালো ১.৪ টন এবং গ্যাস উৎপাদন হবে ৩.৮৪ টন।

পলিথিন নিয়ে কাজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল্লাহ হিল কাফী বলেন, মূলত পরিবেশ দূষণ কমানোর প্রচেষ্টা এটা। আমরা চেয়েছিলাম যাতে এটা পরিবেশ সুরক্ষায় কাজে আসে। আমরা সফল হয়েছি। এই বছরের মধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসতে রাজশাহীতে আরও ২/৩ টা প্ল্যান্ট বসানোর চিন্তা করছি আমরা।

মতিহার বার্তা ডট কম  ২০ আগস্ট  ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply